রিভিউ: নাটকটার নাম কি?-অসমাপ্ত কোলাজ
ব্যস! আর একটু হলেই ভুলটা করে ফেলেইছিলাম আর কি! দু’টো নাটক একই জামা পরে দেখতে যাচ্ছিলাম। মানে ‘ইচ্ছেমতো’ র প্রথম নাটক ‘বুদ্ধিজিবি’ দেখেছিলাম যে জামাটা পরে
সেটা পরে আজকে জ্ঞানমঞ্চে ‘নাটকটার নাম কী?’ দেখতে যাওয়াটা ঠিক মনে হোল না আমার! মানে ওই… নতুন নাটক-নতুন কিছু হবে… জামাটাও নতুন হলে গোটা ব্যাপারটাই বেশ ফ্রেশ ফ্রেশ লাগবে এই আর কি! কিন্তু আবার, আবার সেই একই জায়গায় একই কারনে… না থাক- সেটা পরে বললেও চলবে, পরের ঘটনা যখন।
১২:৩০ এর নাটকে আমি তিন মিনিট দেরি করে পৌঁছলাম। তখন স্টেজের ওপর নীল মুখার্জি। নাট্যকার। তাঁকে ঘিরে তিনজন। একজোড়া যুবক-যুবতী ও একজন অল্পকেশি ভদ্রলোক। তিনজন। ম্যাকবেথের পর পৃথিবীজুড়ে থিয়েটারে ক্ষমতাশীল ও ক্ষমতালোভীর ছায়াসঙ্গী-(উপদেষ্টামণ্ডলী?!) বিভিন্ন ভাবে ও বিভিন্নরুপে- উইচ রা। ভাবনার গতিপথকে বিভ্রান্ত করতে অথবা স্বরূপকে চিনিয়ে দিতে বহুল পরিচিত থিয়েট্রিক্যাল আইকন । এরপর স্টেজে আসেন নাট্যকারের সৃষ্টি করা দুজন চরিত্র। একজন ধর্ষিতা (তূর্ণা) ও অন্য একজন শহরের লক্ষ লক্ষ ‘বিদ্রহি-কবি-প্রেমিক-কাঁধে ঝোলাব্যাগওয়ালা’ দের একজন, প্রত্যয়(সৌরভ)। অনেকটা কথোপকথন ও নাট্যকারের স্বগতোক্তিতে নাটক এগিয়ে চলে এবং একের পর এক রাজনৈতিক ঘটনা-সমস্যা এবং বিষয় স্যাটায়ার কমেডির হাত ধরে দর্শকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়, সাদা প্ল্যাকার্ডে লাল কালি দিয়ে লেখা হয়- ‘বলদা নয় বলদ চাই’, দর্শক হাততালি দেয়।
একজন মেয়ে ধর্ষিতা হওয়ার পর তার ধর্ষণের কন্টিনিউইটি চলতেই থাকে- আরও অনেকদিন- অনেক বছর- হয়ত আজীবন। যে একবার ধর্ষিতা হয় তাকে কোনদিনই ধর্ষণের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয় না আমাদের সমাজ। বাদ যায়না কেউই-, পুলিশ- তদন্ত কমিটি-রাজনৈতিক দল-দাদা-দিদি-মাসি-পিসি-পাড়ার চা ওয়ালা। কিংবা মিডিয়া। ধর্ষণ পরবর্তী ‘বাইট ভিক্ষায়’ সাংবাদিকের হাতে ধরা ‘বুম’ কোন অংশে ধর্ষণকারীর উদ্যত লিঙ্গের চেয়ে কম নয়।
এরপরে আসে Empowerment! ‘আজকাল এই স্টাইলটা বেশ চলছে’। মিশেল রডরিজ যিনি সম্প্রতি রিলিজড হওয়া ‘ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস’ ছবির নায়িকা- তিনি বলেছেন যে “I can’t be the girl who gets empowerment because she’s been raped!” আর women empowerment বলতে আসলে কী বোঝা উচিত সেটা কিছুদিন আগেই শ্রী ‘মতি’ দীপিকা পাদুকোন আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন! কাজেই এ সম্পর্কে বেশি বাক্যব্যয় করে লাভ নেই।
বাকি রইল ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’ আর মুঠো হাত উঁচু করে বলেছিল কলরব হোক। তারা সবাই উলুখাগড়ার দল। রাজাদের যুদ্ধে জলকামান-কাঁদানে গ্যাস-লাঠির সামনে সাদা পতাকা নিয়ে দাঁড়াতে হয় তাদের, প্রাচীন নিয়ম মেনে। দলগুলো প্রয়োজনমত রং লাগিয়ে নিজেদের লোক বলে লেলিয়ে দেয়। নিজের মায়ের থেকে যেখানে ‘ঝিলিকের মা’য়ের টিআরপি বেশি, সেখানে সবই হতে পারে। দূর থেকে রবীন্দ্রনাথের কুশপুত্তলিকা দেখে শুভাপ্রসন্ন বলে বিভ্রম হতে পারে অথবা একই পাঞ্চলাইনে স্টেজের ওপরে-নীচে সবাই একই সাথে হাসতে পারে, হাততালি দিতে পারে।
এই নাটকের সবথেকে মূল উপাদান হোল অভিনয়। মূলত গল্পহীন একটা নাটক- শুধু কথোপকথন আর কম্পোজিশন নিয়ে টানা দেড়ঘণ্টা ধরে একবারও ব্যাকস্টেজে না গিয়ে অনর্গল অভিনয় করে যেতে কতটা পরিশ্রম করতে হয় তার আন্দাজ কারটেন কল এ নীল দর্শকদের খানিকটা দেন। নীল- সৌরভ-তূর্ণা যথাযথ। নাট্যকারের তিন স্যাঙ্গাতের একজন মেয়ে। তাঁকে দুর্বল মনে হোল। মিউজিকে সিধু থাকলেও একটা ছাড়া কোন গানই মনে ধরে না। তূর্ণা খালি গলায় বাউল গেয়ে বরং বেশি মন ভরিয়েছেন। হ্যাঁ, যেটা পরে বলব বলছিলাম…
আবার- আবার সেই একই জায়গায় একই কারনে হতাশ হলাম। শেষটা। ‘বুদ্ধিজিবি’তে শেষটা dragging লেগেছিল। এখানেও একেবারে শেষটা খারাপ না লাগলেও শেষের আগের জায়গাটা ইলাস্টিককে টেনে লম্বা করার মতো। সবাই হাঁপাচ্ছে। নাট্যকারের সৃষ্ট চরিত্ররা নাট্যকারকে নিজের নাটক নষ্ট করার দায়ে আক্রমণ করছে। এলোপাথাড়ি ছুটোছুটি এবং রিপিটেড ডায়লগ চলতে থাকে। এবং চলতেই থাকে। খিদে নিয়ে নাটক দেখতে গেছিলাম, তারপর ভুলেই গেছিলাম। কিন্তু এই জায়গাটায় মনে হোল বাইরে গিয়ে কি খাব-কোথায় খাব, তারচেয়ে বড় কথা- কতক্ষণে এরা থামবে আর আমি খাব!
‘বুদ্ধিজিবি’র সাথে অনেকে অনেক বিষয়ে অনেক মিল খুঁজে পেতে পারেন। অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। আমার জামা চেঞ্জ করার টোটকাটা কাজে লাগলোনা এই যা!
Animeshonly is the founder of hojelive. He has been into theatrics & literature from a very tender age. Apart from producing new content and events for the brand, he loves gazing at the sky, seeping balck coffee and listening to the meows of his cat.