রিভিউ : কুকুরের লেজ-প্রহারেণ সমাপয়েৎ!
বৃষ্টির মধ্যে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে হবে বলে ওস্তাদি দেখিয়ে জোরে হাঁটছিলাম। হরিদার চায়ের দোকানের সামনে চাতালে পা হড়কে মুখ থেবড়িয়ে চশমা, ল্যাপটপ ব্যাগ সমেত জমা জলের মধ্যে পড়ে তখন ভাবছি এই যা: সব ভিজে গেল। এবার পুরো নাটকটা এই নোংরা জল মেখে দেখতে হবে।
এই ভাবে দেছ, হয়ে গেল ছেচ!
হলে ঢুকে দেখি অলরেডি পারফরম্যান্স চলছে। বাকিরা হেঁটে বেড়াচ্ছে আর কৌশিক কর কথা বলে যাচ্ছে। যদিও সাধারন কথাবার্তা, আমার তো ওটাও নাটকের অংশ মনে হচ্ছিলো।
যাকগে, আমি বারবারই ছক ভাঙা নাটকের কথা বলি। কৌশিক কর হতাশ করে না। উপস্থাপনা নিয়ে কথা হবে না! ঠিক জমিয়ে দেবে।
অসম্ভব ভালো টিম ওয়ার্ক যা শুরু থেকেই অনবদ্য কোরিওগ্রাফির কথা মনে করিয়ে দেয়। নাটক ফাটক থেকে দেখে আসছি লাইভ মিউজিকের একটা বিশেষ ব্যবহার থাকেই প্রায় কৌশিকের নাটকে। কুকুরের লেজ এ মিউজিকের ব্যবহার এক্সপেরিমেন্টাল। এবং সে বিষয়ে সফলও।
নাটকের মূল বিষয় বস্তু একটা দ্বন্দ্বের কথা বলে। ব্যক্তিসত্তা এবং তার নিজের (সীমিত/বৃহত্তর) সামাজিক দায়িত্ব আর রাজনৈতিক ক্ষমতাশালীদের সামাজিক কর্তব্য। এই দুটি ব্যাপার একে অপরের ওপর বিভিন্নভাবে নির্ভরশীল। নির্ভরশীল বলেই একে অপরের ওপর দায় ঝেড়ে ফেলে একমুখী অভিযোগ করে যাওয়া যায়। তাই কুকুরের বাঁকানো লেজের মতো অভ্যেসগুলো আমরা কেউই সোজা করে উঠতে পারি না। জনসাধারণের শক্তি আর ‘বুদ্ধিবিচিদের’ বুদ্ধি এক জায়গায় আসার মতোই প্যাঁচালো একটা কুকুরের লেজ ক্রমাগত আমাদের রাজনৈতিক নিয়তিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওই ফাটা রেকর্ডে বাজতে থাকা আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতির ঘেরাটোপে আটকে দেয়। আমরা সোজা হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কষিয়ে একখান লাথি মারতে পারিনা মিথ্যেবাদীদের। যাকগে..
প্রচন্ড এনার্জি নিয়ে কীর্তন, rap, ট্যাপ ডান্স, গম্ভীরা-রাহুলের দারুন কমিক টাইমিং দেড় ঘন্টা জমিয়ে রাখে। আলে আলে গানটা মঞ্চের ওপরে নীচে সবাই একসাথেই গাইছিলো। হুল্লোড় আর হাততালি তে মেতে গোটা সময়টা স্যাটায়ার মেখে, গভীর কিছু উপলব্ধি নিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যেত কিন্ত…
কিন্তু মুশকিল হলো ক্ষুধার চোটে অতিভক্ষণ মোটেই কাম্য নয়।
সাউন্ডের ইমব্যালান্স প্রথম দিকে খুবই কানে লাগে। ভূতেরা প্রথম দিকে সবাই একই ভাবে চেঁচিয়ে কথা বলছিল। অতি উত্তেজনায় ওরকম বিকট চেঁচানোর দিন আমরা পেরিয়ে এসেছি।
লেখকের সাবপ্লট টা বাড়তি লেগেছে। ড্র্যাগ করছিল তখনই। অতক্ষন স্পেস ওরকম একটা দৃশ্য কেন পাবে একটা স্যাটায়ার এ? সামগ্রিক ভাবে আরো একটু বৃহত্তর হতে পারতো ন্যারেটিভটা। গম্ভীরার অত ভালো rap শোনাই গেল না ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের চাপে।
যেহেতু কৌশিক বলেছেন ছয় নম্বর শো থেকে আসল অভিনয় শুরু হবে, তাই তপন থিয়েটারে আগামী ২৭শে অক্টোবর আরো ভালো কিছু নিশ্চয়ই উপহার দেবে কলকাতা রঙ্গিলা। থিয়েটারের ফর্ম নিয়ে ক্রমাগত এক্সপেরিমেন্ট করে যাওয়ার জন্য কৌশিক করকে সাধুবাদ😊
Animeshonly is the founder of hojelive. He has been into theatrics & literature from a very tender age. Apart from producing new content and events for the brand, he loves gazing at the sky, seeping balck coffee and listening to the meows of his cat.