আর্ট: জটিল আত্মসমীক্ষার সরলীকরন
আর্ট দেখলাম। তৃতীয় বার। অনেক গুণী মানুষ আর্টের টেকনিক্যাল দিক গুলো নিয়ে অসম্ভব সুন্দর করে রিভিউ লিখেছেন বলেই আমার অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা করা ভালো।
হল থেকে বেরোনোর সময় শুনলাম একটি ছেলে নিজের বান্ধবীকে বলছে শুধু অনির্বানদার কমিক রিলিফ গুলোর জন্য নাটক টা দেখা গেল! অবাক হলাম না। দোষ টা খারাপ খাবারের। যেটা দিনের পর দিন খেয়ে খেয়ে ওটাকেই স্বাভাবিক বলে মনে হয়। হঠাৎ ওরকম ছক ভাঙা কিছু দেখলে হজম করতে কষ্ট হবেই তো।
এর আগে অনেকে গৌতমদার গলা শোনা যায়না বলে জানিয়েছিলেন। আমার তো বরং এবারের শো তে অনির্বান দার কিছু শব্দ কিছু জায়গায় শুনতে অসুবিধে হলো। এবং অদ্ভুতভাবে একটুও অসুবিধে হয়নি! পুরো নাটকটির অভিনয় এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত যে এই শব্দ হারিয়ে যাওয়া কে আমাদের রোজকার কথাবার্তার মতোই স্বাভাবিক লাগে।
নিজে anxiety র সমস্যায় ভুগি বলে মৈনাকের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বড্ড চেনা লাগলো। একগুঁয়েমি টাও!
রিশেলের pseudo ইন্টেলেকচুয়াল (?) সত্তা আর মৈনাকের ডিপ্রেসেড ন্যারোনেস কোথাও গিয়ে মাস মেডিওক্রিটিকে সিম্বলাইজ করে। অনুভবের মতো (নাকি সুপ্রিম বোসের মতো করে!) করে আর অনুভব করে ওঠা হয়না আমাদের মধ্যেকার ‘আমি’ আর অন্যদের ‘তুমি’ গুলোকে। আমাদের আমিগুলো তাই আমাদের মতো করেই আমাদের আমি হয়ে থেকে যায়। অন্যদের মধ্যে থাকা আলাদা আলাদা ‘আমি’ কে আর চিনে ওঠা হয়না।
যে কারনে বন্ধুত্বের সম্পর্কে মৈনাক কন্ট্রোলফ্রিক/ ডমিনেন্ট হতে চায়। রিশেল পুঁজির জোরে সফিস্টিকেশন গায়ে মাখে। আর অনুভব সবদিক সামাল দেওয়া নীললোহিত! মাঝের সময়টা একটু ড্র্যাগড লাগলো। দৈর্ঘ্য একটু কম হলে ভালো হয়। ওয়াইন গ্লাসের ওয়াইন শেষ হতে এতগুলো চুমুক লাগে না!
প্রথম ছয় সাত মিনিট তিনটে চরিত্রকেই কোন কারনে ক্লান্ত লাগছিলো। এগুলো নিয়েও কেন আর্ট সত্যিই আর্ট সেটা জানতে হলে ছক ভাঙা থিয়েটার দেখা অভ্যেস করতে হবে।
এবং:
বাংলা থিয়েটার কারা দেখে থাকেন? কোন বয়সি? তাদের শিক্ষা দীক্ষা কতদূর? তারা কি থিয়েটার হলের বেসিক এটিকেট গুলো ফলো করেন? তারা কি আদৌ উন্নত মানের থিয়েটার ডিসার্ভ করেন?
প্রশ্নগুলো নিজেকেই করলাম। প্রত্যেক বার নাটক দেখতে গিয়ে উত্তর গুলো পেয়ে থাকি। তারপর আশ্বস্ত হই বাংলা থিয়েটার নিজের দুর্গন্ধময় গুহ্যদ্বার নিয়ে সুখী আছে। সুখী আছে সিটে বসে অনর্গল কাশিতে, ফোনের রিংটোনে, দুমদাম হুড়হার আওয়াজে, ‘কোনটা’ সিরিয়াল করে সেই আলোচনায়, সঙ্গীকে ধারাভাষ্য দিয়ে /ট্রান্সলেট করে যাওয়ায়…
ঠিকই আছে। যেমন কোমর, তেমনি জাঙ্গিয়া! ঠিকই আছে। নাট্য সিন্ডিকেট, অতি অভিনয়, চুতিয়া অভিনয়, মেকআপ, অপ্রয়োজনীয় সেট, বস্তাপচা টেক্সট, প্রচুর আলো, প্রচুর মিউজিক, কস্টিউম এই সব নিয়ে ঠিকই তো আছে! কার কি যায় আসে!
আর্ট নিয়ে এতজন এতকিছু লিখছেন তার কারনটা উপরের এই ছ্যাবলামোগুলো (কেন ছ্যাবলামো সে নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে) নেই বলে! নেই বলেই গৌতমদারা আর্ট চালিয়ে নিয়ে যেতে পারছে সীমিত ক্ষমতা সত্ত্বেও। এটাই গুরুত্বপূর্ণ! মেদহীনতা! ফ্লুইডিটি! যদি আপনার বাবা দাদু আপনার জন্য নাটকের দল করে গিয়ে না থাকেন, যদি আপনার লবি/গ্রান্ট না থাকে, তাহলেও যদি থিয়েটার টা চালিয়ে নিয়ে যেতে চান, তাহলে ফ্লুইডিটি আনুন! বাদল সরকার হতে হবে না! শুধু নাটকের জন্য যা প্রয়োজন সেটুকু রেখে বাকি সব ছেঁটে ফেলুন।
বাঙালী দর্শক প্রচুর কাস্ট, সেট, কস্টিউম ওয়ালা নাটক কিছুদিন না দেখতে পেলে কিচ্ছু মনে করবেনা। এমনিতেই নতুন দর্শক নেই। নতুন দর্শক তৈরি হয়না। নাটকের লোকেরাই নাটক দেখে। নতুন, নাটক না দেখা দর্শককে থিয়েটার হলে টেনে আনতে হলে এক্সপেরিমেন্টাল কাজ, নিয়মিত কাজ এবং বাহুল্য বর্জিত কাজই উপায়।
অন্তত আমার তাই মনে হয়।
Animeshonly is the founder of hojelive. He has been into theatrics & literature from a very tender age. Apart from producing new content and events for the brand, he loves gazing at the sky, seeping balck coffee and listening to the meows of his cat.