অসুখের পরের দিন
হঠাৎ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে হোল। অনেকদিন ধরে জ্বরের অন্ধকার ছিল চোখে, তাই বোধহয় শীতের দুপুরটা বড্ড বেশি উজ্জ্বল লাগছে। সবকিছুকে।
চারপাশটা বেশ অস্থির। একটা যেন ক্যাওস হয়ে চলেছে। এখানে সেখানে। কোথাও কেউ চুপচাপ, শান্তিতে নেই। এখানে ওখানে- জটলা বেঁধে–গম্ভীর মুখ করে, অথবা আইসক্রিম খেতে খেতে সবাই যেন একে ওপরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে করে চলেছে।
একটা চোদ্দ পনেরো বছরের ছেলের নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে। ওকে ওরই বয়সি বোন নিয়ে যাচ্ছে।
দু’এক জায়গায় পুলিশ। খুবই শান্ত, ধীর স্থির।
গা টলছে। বেরিয়ে পড়া ঠিক হয়নি বোধহয়। এখনও বেশ দুর্বল মনে হচ্ছে। চোখে পরিষ্কার কিছু দেখাও যাচ্ছে না, ধুর!
মিনি বাস। প্রায় ফাঁকা। রবিবার। তায় দুপুর। সামনের সীটে বাঁদিকে বসা যাক; কন্ডাক্টর হওয়ার প্রথম এবং প্রধান শর্ত কী?
খুব জোরে চেঁচিয়ে কথা বলতে হবে। সবসময়। চেঁচানোর দরকার না থাকলেও।
বাসের জানালা আজ টি ভি স্ক্রিনের মতো লাগছে। ওদিকের সবকিছু অবাস্তব অথবা নতুন। এর মানে টিভিতে যা দেখা যায় তার সবকিছুকে অবাস্তব অথবা নতুন হতে হবে না নিশ্চয়ই(?!)
হাওড়া ব্রিজের মুখে লাল সাইনবোর্ড।
“পথচারীরা ফুটপাথ ব্যবহার করুন”।
স্ট্র্যান্ড রোডের ফ্লাই ওভারে মিনিবাস বাঁক নিচ্ছে। এন এফ এস ভিডিও গেমে যেমন গাড়ীগুলো বাঁক নেয়|
হঠাৎ শব্দ। ডান দিকের বৃদ্ধ লাঠি সমেত বাসের মেঝেতে। চোখে মুখে অপার বিস্ময়। হাত ধরে সীটে বসানর পর খানিক স্থির, “দ্যাখো কিরকম জানোয়ারের মতো গাড়ি চালাচ্ছে!”
আজ ধর্মতলায় আবার কেউ বা কারা চিৎকার করছে। বাস ভর্তি লোক আসছে। চড়ুইভাতি। বিনেপয়সায় শহর। গরম পেটিস, বাদাম ভাজা; পুলিশের ভালো দিন।
“স্যর-, এদিকের মেট্রোটা কোন দিক দিয়ে…”
“সামনে গিয়ে বাঁদিকে”।
আজ মেট্রো রেল থুড়ি পাতালরেলেও অবাঞ্ছিত দর্শনার্থী, উফ!
ক্যাওসেরই দিন। নন্দন এ একটা ভালো সিনেমা লাগেনি। অ্যাকাডেমিতে একটা ও ভালো নাটক চলছে না। একজিবিশনেও তেমন কিছু পাওয়া গেল না। এতো আওয়াজ কেন আজ? সবাই শুধু চিৎকার করছে।
সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের বাইরে দাঁড়িয়ে অনায়াসে বলা যায়- স্কটল্যান্ডের কোনও প্রদেশে আছি।
নিজের বাড়ির ড্রইংরুমেও বোধহয় কেউ এমন দাপট এবং নির্লিপ্ততা নিয়ে ঢুকতে পারে না। সোজা কোনও দিকে না তাকিয়ে প্রেয়ার হল এ পেছনের পাঁচটা সারি ছেড়ে তিন নম্বর চেয়ারে ধপাস।
সামনে সবুজ কাপড় বেঁধে কারা যেন কি সব ঠোকাঠুকি করছে। ডাইনে বাঁয়ে পেছনে ইতিউতি লোকজন কোলের ওপর হাত রেখে চুপচাপ। কেউ কেউ চোখ বন্ধ। ওই বিশ্রী ঠকঠক শুনছে?
আজ ক্যাওসেরই দিন।
কয়েকজন চীনা পর্যটক এলো। পেছনে ঘুরতেই সমবয়সী সুন্দরী। হাসতেই প্রতিউত্তর পাওয়া গেলো। সাথে চোখ পিটপিট ফ্রি!
চার্চের সামনের রাস্তা। বাসের সোঁ সোঁ আর পা’দুটো, আরও টলোমলো। প্রচুর মুখ। সুন্দর অথবা আরও সুন্দর। সাজসজ্জা। পোশাক। গাঁজা। গিটার। হাসি।
হঠাৎ মনে হোল, অনেকদিন বাড়ি ফেরা হয়নি!
Animeshonly is the founder of hojelive. He has been into theatrics & literature from a very tender age. Apart from producing new content and events for the brand, he loves gazing at the sky, seeping balck coffee and listening to the meows of his cat.